বাইজেন্টাইন শহর : বাইজান্টাইন অঞ্চলে ওমর (রা)-এর খিলাফত সম্প্রসারণ।

বাইজেন্টাইন শহর : বাইজান্টাইন অঞ্চলে হযরত ওমর (রা)-এর খিলাফত সম্প্রসারণ।
The Expansion of Khilafat in Byzantine Area by Hazrat Umar (R)

সিরিয়া, জর্ডান, প্যালেস্টাইন ও মিসরের বিস্তীর্ণ ভূভাগ পূর্বে রােমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ রােমান সাম্রজ্যই বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য (বাইজেন্টাইন শহর) ভৌগােলিক দিক থেকে সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন আরবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব অঞ্চল শক্তিশালী বাইজান্টাইন শাসকদের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। ফলে রাজনৈতিক দিক থেকে ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে এসব অঞ্চল জয় করা প্রয়ােজন ছিল।) নামে পরিচিত ছিল। মুহাম্মদ (স) রােমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের দরবারে দূত প্রেরণ করলে সম্রাট মুসলিম দূতকে সাদরে গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে বসরার শাসকের কাছে প্রেরিত মুসলিম দূতকে সিরিয়ার বনি গাসসানের শাসক মুতা নামক স্থানে হত্যা করলে মুসলমানদের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ধীরে ধীরে মুসলিম রাষ্ট্র শক্তিশালী শক্তিশালী হয়ে উঠলে রােমান সম্রাট ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্নভাবে মুসলমানদের দমনের চেষ্টা করেন। ফলে আত্মরক্ষার জন্য মুসলমানরা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও মিসর দখল করে।

বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে (বাইজেন্টাইন শহর) মুসলমানদের খিলাফত সম্প্রসারণের কারণ।
মসলিম দূত হত্যা:
মহানবি (স)-এর জীবদ্দশায় মুসলিম দূত হারিস বিন উমায়েরকে রােমান সামন্তরাজ শুরাহবিল (গাসসান গােত্রের নেতা) মুতা নামক স্থানে হত্যা করে। এটা ছিল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের শামিল। ফলে ওই সময় মতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। হারিসের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রােমানদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে । এছাড়া রিদ্দা যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সাহায্য করায় খলিফা আবু বকর (রা) রােমান সীমান্তে অভিযান প্রেরণ করেন। খলিফা ওমর (রা) ও এ অভিযান অব্যাহত রাখেন। অর্থনৈতিক কারণ: সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও মিসর ছিল উর্বর এলাকা। অপরদিকে আরবের অধিকাংশ অঞ্চল ছিল মরুময়। সুতরাং আরবরা নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়ােজনে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সিরিয়া, মিসর প্রভৃতি উর্বর অঞ্চল দখলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।

বাণিজ্যিক কারণ:
আরব বণিকেরা বাণিজ্য উপলক্ষে বাইজান্টাইন অঞ্চলে (বাইজেন্টাইন শহর) যাতায়াত করত। এ অঞ্চলের অনেক অধিবাসী। আরব বংশােদ্ভূত ছিল এবং আরবদের সাথে তাদের অনেকেরই বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। ফলে আরব বণিকদের সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার আকাঙ্ক্ষাও রােমানদের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষে ভূমিকা রাখে।

ভৌগােলিক কারণ:
ভৌগােলিক দিক থেকে সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন আরবের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব অঞ্চল শক্তিশালী বাইজান্টাইন শাসকদের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। ফলে রাজনৈতিক দিক থেকে ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে এসব অঞ্চল জয় করা প্রয়ােজন ছিল। রিদ্দা যুদ্ধে রােমানরা বিদ্রোহীদের সাহায্য করায় নবপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল। এসব কারণে মুসলমানরা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য (বাইজেন্টাইন শহর) আক্রমণ করে।

সিরিয়া বিজয় :
মহানবি (স)-এর জীবদ্দশায় মুতা অভিযান এবং আবু বকরের (রা) খিলাফতের শুরুতে উসামার নেতৃত্বে সিরিয়া অভিযান মুসলিম দূতকে হত্যার প্রতিশােধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল। প্রথমটিতে মুসলিম বাহিনী বিপর্যস্ত হলেও দ্বিতীয়টিতে উসামা রােমানদের বিরুদ্ধে বিজয় গৌরব অর্জন করেন। স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে হযরত আবু বকর (রা) রিদ্দার যুদ্ধের পর সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে অভিযান প্রেরণ করেন। তিনি আমর ইবন আসকে প্যালেস্টাইন, ইয়াজিদ ইবন আবু সুফিয়ানকে দামেস্ক, আবু ওবায়দাকে হিমস এবং শোরাহবিলকে জর্ডান উপত্যকা অঞ্চলে পাঠান। এ অভিযানে সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমর-ইবনুল আসকে।

See also  জিজিয়া কী? ইসলামি রাষ্ট্রে জিজিয়া কেন প্রবর্তন করা হয়েছে?

আরাবর ও গাজার যুদ্ধ :
হযরত আবু বকরের (রা) শাসনামলে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত সাগর ও আকাবা উপসাগরের মধ্যবর্তী আরাবা উপত্যকায় মুসলমানদের সাথে রােমানদের প্রথম মুখােমুখি সংঘর্ষ হয় এবং রােমানরা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়। এরপর প্যালেস্টাইনে নিযুক্ত রােমান শাসনকর্তা সার্জিয়াস গাজার নিকটবর্তী একস্থানে আমর ইবনুল সাসের সাথে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে সার্জিয়াস পরাজিত ও নিহত হন। যুদ্ধের পর আমর সামনে অগ্রসর না হয়ে কেন্দ্রের সাহয্যের জন্য আরাবায় অপেক্ষা করেন। অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করে সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে ইরাক থেকে সিরিয়ায় প্রেরণ করা হয়।

আজনাদাইনের যুদ্ধ (জুলাই, ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) :
মুসলমানদের যুদ্ধ পরিকল্পনার সংবাদে অভিযান প্রতিহত করতে ২,৪০,০০০ (মতান্তরে এক লক্ষ) সৈন্যের এক বিরাট বাহির প্রেরণ করেন। মুসলমানরা ৪০,০০০ সৈন্য নিয়ে রােমান বাহিনীর সাথে ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে আজনাদাইনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।। এ যুদ্ধে রােমান বাহিনী পরাজিত হয়। ফলে গাজা, নিউপলিস, জাফা প্রভৃতি যুদ্ধে বিজয়ের সংবাদ শােনার পর প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) মৃত্যুবরণ (আগস্ট ৬৩৪ খ্রী.) করেন।

দামাস্কাস বিজয় :
খলিফা ওমর (রা) খালিদ বিন ওয়ালিদকে সিরিয়া বিজয়ের আদেশ দেন।আজনাদাইনদের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর রােমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস এন্টিওক শহরে আশ্রয় নেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ ৬৩৫ খ্রীস্টাব্দে সিরিয়ার রাজধানী এবং অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র দামাস্কাস অবরােধ করেন। ছয় মাস অবরােধের পর নগরবাসী সম্রাটের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলমানদের সাহায্য করলে দামাস্কাস মুসলমানদের দখলে আসে।

ফিহল ও হিমসের যুদ্ধ (৬৩৫ খ্রি.) :
৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের ৫০,০০০ সৈন্যের রোমান বাহিনীর সাথে খালিদের নেতৃত্বে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়। ফিহলে সংঘটিত এ যুদ্ধেও রােমানরা পরাজিত হয়। এ সময় সমগ্র জর্দান উপত্যকা মুসলমানদের অধিকারে আসে। বিজয়ী মুসলমানরা পরাজিত রােমানদের জীবন নিরাপত্তা দিয়ে মানবাধিকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। জর্দান অধিকারের পর বিজিত অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠনে খলিফা সেনাপতি আবু উবায়দাকে হিমসে, আমর ইবনুল আসকে জর্দানে এবং খালিদ বিন দামাস্কাসের শাসনভার ন্যস্ত করেন। ৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানরা খণ্ডযুদ্ধের মাধ্যমে হিমস দখল করে।খলিফা ওমর (রা) এর নির্দেশে মুসলিম বাহিনী সামনে আর অগ্রসর হয়নি।

ইয়ারমুকের যুদ্ধ (৬৩৬ খ্রি.) :
মুসলমানদের হাতে দামাস্কাস, হিমস ও জর্দানের পতনের ফলে রােমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস অত্যন্ত রাগান্বিত হন। তিনি ভ্রাতা থিওডােরাসের নেতৃত্বে ৫০,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী পুনরায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। মুসলিম সেনাপতি আবু ওবায়দা, আমর ইবনুল আস ও খালিদ বিন ওয়ালিদ ইয়ারমুকে এসে উপস্থিত হন। মুসলমানদের সব মিলিয়ে সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ২৫,০০০। উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘটিত মাসব্যাপী খণ্ডযুদ্ধের পর ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ারমুক উপত্যকায় এক সর্বাত্মক যুদ্ধে রােমানরা পরাজিত হয়। এ বিপর্যয়ের সংবাদ শুনে হিরাক্লিয়াস কনস্টান্টিনােপলে পালিয়ে যান। ইসলামের ইতিহাসে ইয়ারমুকের যুদ্ধকে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে সমৃদ্ধিশালী সিরিয়া স্থায়ীভাবে মুসলিম অধিকারে আসে। রােমান বাহিনীর মনােবল ভেঙে পড়ে এবং মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার সাহস হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে এ যুদ্ধের সাফল্য মুসলমানদের পরবর্তী বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে। ইয়ারমুকের যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই খলিফা ওমর (রা) খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেন। তার স্থলে আবু ওবায়দা ইবনে জাররাকে নিয়ােগ দেওয়া হয়। নতুন সেনাপতি বারবেক, এডােনা ও আলেপ্পোসহ সমগ্র সিরিয়া জয় করেন।

See also  শিয়া কারা? ইসলামের ইতিহাসে শিয়া বলতে কাদেরকে বোঝায়?

প্যালেস্টাইন বিজয় :
খলিফা আবু বকর (রা) প্যালেস্টাইনের কিছু অংশ বিজিত হয়েছিল। ইয়ারমুকের যুদ্ধের প মুসলিম বাহিনী সেনাপতি আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে রােমান শাসনকর্তা আরতাবিনকে পরাজিত করে ৬৩৭ প্যালেস্টাইন দখল করেন। এরপর মুসলমানরা প্যালেস্টাইনের রাজধানী জেরুজালেম অবরােধ করেন। অনেক চেস্টা করেও রােমানরা জেরুজালেম অধিকারে রাখতে পারেনি। অবরুদ্ধ জেরজালেমবাসীর দাবি অনুযায়ী খালফা ওমর( র) নিজে জেরুজালেমে উপস্থিত হয়ে খ্রিষ্টানদের সাথে সন্ধি স্বাক্ষর করে জেরুজালেমের ভার স্বহস্তে গ্রহণ করেন। জিজিয়া করদানের শর্তে জেরুজালেমের নাগরিকদের জানমাল ও ধর্মীয় নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। জেরুজালেমে পতনের ফলে- সমগ্র প্যালেস্টাইন মুসলিম কর্তৃত্বাধীনে আসে।

জাজিরা বিজয় (৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে):
মেসােপটেমিয়ার উত্তরে বিস্তৃত ভূখণ্ডকে জাজিরা (উপদ্বীপ) বলা হতাে। জাজিরাবাস সম্রাটের প্ররােচনায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। মুসলমানরা বাধ্য হয়েই ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আবু ওবায়দার নেতৃত্বে জাজিরা দখল করে। আবু ওবায়দা ৩০,০০০ বিদ্রোহী জাজিরাবাসীকে পরাজিত করে মুসলিম শাসনের অধীনে আনেন।

আর্মেনিয়া ও উত্তর মেসােপটেমিয়া বিজয় :
রােমানদের প্ররােচনায় কর্দ ও আর্মেনিয়ানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মুসলমানরা কুর্দ অধ্যুষিত উত্তর মেসােপটেমিয়া ও আর্মেনিয়া দখল করেন। তারা এশিয়া মাইনরে রোমান শক্তির কেন্দ্র সাইলিসিয়া প্রদেশও অধিকার করেন।এভাবে খলিফা ওমর (রা)-এর প্রচেষ্টায় মাত্র ছয় বছরের মধ্যে সমগ্র সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন আরব মুসলমানদের অধিকারে আসে। খলিফা হযরত মুয়াবিয়া (রা)কে সিরিয়ার প্রদেশপাল নিয়ােগ করেন।

সিরিয়া বিজয় :
মিসর ছিল আরবের পশ্চিমে মুসলিম অধিকৃত অঞলের কাছের একটি দেশ । রােমানরা সিরিয়া,প্যালেস্টাইন ও জেরুজালেম থেকে পরাজিত হয়ে মিসরে অবস্থান করছিল। মুসলমানদের মিসর বিজয়ের অন্যতম কারণ আত্মরক্ষা। মিসর ইসলামি রাষ্ট্রের কেন্দ্র হেজাজের নিকটবর্তী একটি দেশ। এখানে রােমানদের উপস্থিতি মুসলিম রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এখান থেকে রােমানদের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার আশঙ্কা ছিল। নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত মিসরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মুসলমানদের মিসর জয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল । খলিফা ওমর (রা)-এর অনুমতিক্রমে ৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে আমর ইবনুল আস ৪,০০০ (চার হাজার) সৈন্য নিয়ে মিসরের দিকে অগ্রসর হন। ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিসরে প্রবেশ করে রােমানদের সাথে হেলিপলিস নামক স্থানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধে বােমানরা মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়। এরপর মুসলিম সেনাপতি আমর আস ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে রােমানদের প্রধান সামরিক ঘাঁটি আলেকজান্দ্রিয়া অবরােধ করেন। সম্রাট সিজার্স তার ভ্রাতা থিওডােরসকে সাহায্য করার জন্য ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মুসুলমানদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। রােমান বাহিনী মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়। আলেকজান্দ্রিয়া পতনের সাথে সাথে রােমানদের প্রতিরােধ ক্ষমতা লােপ পায় এবং মিসর মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। আমর ইবনুল আস ব্যাবিলনের কাছে একটি শহরকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তােলেন । এটির নাম দেন ফুসতাত নগরী। এটি ৬৪২ থেকে ৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিসরের রাজধানী ছিল।

See also  জুন্নুরাইন বলতে কী বােঝায়? হযরত ওসমান (রা) কে জুন্নুরাইন বলা হয় কেন?

মিসর বিজয়ের গুরুত্ব :
ইসলামের ইতিহাসে মিসর বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। মিসর বিজয়ের ফলে মুসলমানদের আর্থিক উন্নতি ঘটে। আফ্রিকায় মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সুযােগ তৈরি হয় । খলিফার নির্দেশে আমর সুয়েজ খাল খনন করে নীল নদ ও লােহিত সাগরকে সংযুক্ত করেন। এর ফলে মিসর থেকে আরবের সামুদ্রিক বন্দর ইয়ানবু পর্যন্ত যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। ৮০ বছর সচল থাকার পর বালু পড়ে এটি বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তর আফ্রিকা অভিযান :
মিসর থেকে বিতাড়িত হয়ে রােমানরা উত্তর আফ্রিকার বার্কা ও ত্রিপােলি থেকে মিসর সীমান্তে আক্রমণ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ফলে ৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে খলিফার নির্দেশে মুসলিম বাহিনী বার্কা ও ত্রিপােলি আক্রমণ করে। পরাজিত হয়ে সেখানকার অধিবাসীরা করদানের শর্তে মুসলমানদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়।

বাইজান্টাইন অঞল  (বাইজেন্টাইন শহর) বিজয়ের ফলাফল :
মুসলমানদের বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সিরিয়া, মিসর ও প্যালেস্টাইন বিজয়ের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামি সাম্রাজ্যের সীমা অনেক বেড়ে যায় এবং ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পি. কে. হিট্টি বলেন, খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং আমর ইবনুল আসের ইরাক, পারস্য, সিরিয়া ও মিসর অভিযান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সামরিক অভিযানসমূহের অন্যতম এবং এটা নেপােলিয়ন, হ্যানিবল ও আলেকজান্ডারের পরিচালিত যুদ্ধগুলাের সাথে তুলনাযােগ্য।
সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও মিসর দখলের ফলে মুসলমানরা উর্বর ও সমৃদ্ধিশালী এলাকার অধিকারী হয়। এর মাধ্যমে তারা ভূমধ্যসাগরের সংস্পর্শে আসে এবং একটি শক্তিশালী নৌশক্তির অধিকারী হয়। ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। এ বিজয়ের মাধ্যমেই মুসলমানরা গ্রিক ও রােমান সভ্যতার সংস্পর্শে আসে এবং পরস্পরের সম্মিলনে এক উন্নত ইসলামি সভ্যতা গড়ে তােলে। অবশ্য পারস্য বিজয়ের মতাে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে সাফল্যের একটি নেতিবাচক দিকও ছিল। বস্তুত এ বিজয়ের ফলে মুসলমানরা রােমান দরবার ও সমাজের বিলাসিতা ও শানশওকত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে অনাচার বৃদ্ধি পায়। পাপ-পঙ্কিলতা মুসলিম সমাজের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে ফেলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *