[et_pb_section fb_built=”1″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_row _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_column type=”4_4″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_text _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” text_text_color=”#2c3e50″ text_font_size=”15px” header_2_text_color=”#34495e” header_2_font_size=”20px” header_3_text_color=”#2c3e50″ header_3_font_size=”19px” text_font_size_tablet=”16px” text_font_size_phone=”14px” text_font_size_last_edited=”on|desktop” header_2_font_size_tablet=”” header_2_font_size_phone=”19px” header_2_font_size_last_edited=”on|phone” header_3_font_size_tablet=”” header_3_font_size_phone=”18px” header_3_font_size_last_edited=”on|phone” global_colors_info=”{}”]ঈদে মিলাদুন্নবী এর পরিচয়:-
মহানবী (সা.)–এর আবির্ভাব দিবসটি আমাদের সমাজে ফাতেহায়ে দোয়াজদাহুম ,ঈদে মিলাদুন্নবী বা মিলাদ নামে পরিচিত। ‘ফাতেহায়ে দোয়াজদাহুম’ কথাটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। দোয়াজদাহুম মানে বারো, ফাতেহায়ে দোয়াজদাহুম অর্থ হলো বারো তারিখের ফাতেহা অনুষ্ঠান। কালক্রমে এ দিনটি মিলাদুন্নবী (সা.) নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর অর্থ হলো নবী (সা.)-এর জন্ম অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ রূপ ধারণ করে, যার অর্থ হলো হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ উৎসবমুখর দিন। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন্নবী (সা.)’, অর্থাৎ নবী (সা.)-এর জীবনচরিত বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান। এ দিবসে অনেকে জশনে জুলুছ বা শোভাযাত্রাও করে থাকেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী , মিলাদ বা মাওলিদ হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ উৎসবমুখর দিন। নবীজির জীবদ্দশায় এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা না হলেও তাঁর মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর প্রথমবারের মতো ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয় চতুর্থ হিজরি শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শিয়াদের উদ্যোগে । সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরিতে (৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ) বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনি বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জোদ্দৌলা ১০ মহররম আশুরাকে শোক দিবস এবং জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখকে গাদিরে খুম উৎসব দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন। ইসলামি পণ্ডিতগণের মাঝে অনেক বিতর্ক থাকলেও কালক্রমে এই উৎসবটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মহানবী (সা.) এর সঠিক জন্ম তারিখ:-
মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. এর জন্মতারিখ বা ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে সিরাতগ্রন্থ, জীবনীকার, ইতিহাসবেত্তা ও জ্যোতির্বিদগণের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত যে তাঁর জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের শুক্লপক্ষে সোমবার প্রত্যুষে বা ভোরবেলায়, তথা উষালগ্নে। তাঁর বেলাদাত ও ওফাত ১২ রবিউল আউয়াল হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তদুপরি প্রিয় নবী (সা.)-এর আগমন ও প্রস্থান একই দিনে, একই সময়ে—এ কথাও সর্বজন বিদিত।
মিলাদের পরিচয়:-
মিলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো জন্মলগ্ন বা জন্ম সম্পর্কে আলোচনা। আমাদের পরিভাষায় মিলাদ বলতে বুঝি, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও জীবনী আলোচনা এবং তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা। এ বিষয়ে মহা গ্রন্থ কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে: – নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ তাঁর প্রতি রহমতের দোয়া করেন; হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ ও যথাযথরূপে সালাম পেশ করো। (সূরা: আহযাব-৩৩, ৫৬)।
সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের যুগে মিলাদ বা ঈদে মিলাদুন্নবী।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর প্রথম যুগে সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিন বা ঈদে মিলাদুন্নবী বা মিলাদ পালন বা উদযাপন করার কো প্রচলন ছিল না। মুহাদ্দিস, ফিকহ ও ঐতিহাসিকদের গবেষণায় এই মত পাওয়া যায়।
একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সাহাবিদের আলোচনা, সব চিন্তা-চেতনার প্রাণ, সব কর্মকাণ্ডের মূল, তাঁরা নবীজির জীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করে তাঁর ভালোবাসায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন। তাঁর আকৃতি, প্রকৃতি ও পোশাক-আশাকের কথা বর্ণনা করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু তাঁরা কখনো তার জন্মদিন পালন করেননি। এমনকি তাঁর জন্ম মুহূর্তের ঘটনাবলি আলোচনার জন্যও তাঁরা কখনো বসেননি বা জন্ম উপলক্ষে কোনো দান সদকা কিংবা আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেননি। তাঁদের পর তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের অবস্থাও একই ছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জন্মদিন পালন বা ১২ রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা ও অবৈধতা নিয়ে আলেমগণেরে মাঝে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। তবে মিলাদুন্নবী উদযাপনের পক্ষের ও বিপক্ষের সব আলেম ও গবেষক একমত যে, ইসলামের প্রথম শতাব্দীগুলোতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার কোনো প্রচলন ছিল না।
প্রখ্যাত মহাদ্দিস ও হক্কানি আলেমগণের মতামত।
(১) নবম হিজরি শতকের অন্যতম আলেম আল্লামা ইবনে হাজর আল-আসকালানি (মৃত্যু ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দ) লিখেছেন, ‘ ঈদে মিলাদুন্নবী বা মাওলিদ বা জন্মদিন পালন মূলত বিদ’আত। ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন শতাব্দীর সালফে সালেহিনদের মধ্যে কোনো একজনও এই কাজ করেননি।
(২) হিজরি নবম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রখ্যাত মুদাদ্দিস আল্লামা আবুল খাইর মুহাম্মাদ ইবন আব্দুর রহমান আস-সাখাবি তিনি লিখেছেন: ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন যুগের সালফে সালেহিনদের মধ্যে কোনো একজনকেও ঈদে মিলাদুন্নবী বা মাওলিদ বা জন্মদিন পালনের কোনো ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না। মাওলিদ পালন বা উদযাপন পরবর্তী যুগে উদ্ভাবিত হয়েছে। এরপর থেকে সব দেশের ও সব বড় বড় শহরের মুসলিমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম মাস পালন করে আসছেন। এ উপলক্ষে তারা অত্যন্ত সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবময় খানাপিনা ও মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। এ মাসের রাতগুলোতে তারা নানা রকমের দান সদকা করেন, আনন্দ প্রকাশ করেন এবং জনকল্যাণমূলক কর্ম বেশি করে করেন। এ সময় তারা নবীজীর জন্মকাহিনী পাঠ করেন ও অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করেন ।
(৩) লাহোরের প্রখ্যাত আলেম সাইয়েদ দিলদার আলি (মৃত্যু ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ) মিলাদের পক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ ঈদে মিলাদুন্নবী বা মিলাদের কোনো সূত্র প্রথম তিন যুগের সালফে সালেহিন থেকে বর্ণিত হয়নি। বরং তাঁদের যুগের পর এর প্রচলন উদ্ভাবিত হয়েছে।’
আলেমদের এই ঐকমত্যের সূত্র হলো দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে সংকলিত অর্ধশতাধিক সনদভিত্তিক হাদিসের গ্রন্থ, এসব গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কর্ম, আচার-আচরণ, কথা, অনুমোদন, আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদি সংকলিত হয়েছে। সংকলিত হয়েছে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িদের মতামত ও কর্ম, সেসব গ্রন্থের একটি হাদিসেও দেখা যায় না যে, রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় বা তাঁর মৃত্যুর পর কোনো সাহাবি রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে , পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর জন্ম উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বা অনির্দিষ্টভাবে বৎসরের কোনো সময়ে কোনো অনুষ্ঠান করেছেন।
জন্মদিন উদযাপনের সংস্কৃতি:-
বস্তুত, কারও জন্ম বা মৃত্যুদিন পালন করার বিষয়টি আরবীয় লোকদের কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল। জন্মদিন পালন অনারবীদের সংস্কৃতির একটি অংশ, এর মধ্যে পারস্যের মাজুস (অগ্নি উপাসক) ও বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানদের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিবস পালন করার মতো বিষয়গুলো। হিজরি তৃতীয় শতাব্দী থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যে অনারব পারসিয়ান ও তুর্কি মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যে নতুন নতুন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতির প্রচলন ঘটে। এসব রীতিনীতি ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী ছিল অন্যতম।
ঈদে মিলাদুন্নবী প্রথম উদযাপন :-
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, দুই ঈদের বাইরে কোনো দিবসকে প্রথমবারের মতো উদযাপন শুরু হয় চতুর্থ হিজরি শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শিয়াদের উদ্যোগের মাধ্যমে, সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরিতে (৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ) বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনি বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জোদ্দৌলা ১০ই মহররম আশুরাকে শোক দিবস এবং জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখকে গাদিরে খুম উৎসব দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় শুধু শিয়ারাই এই দিবস পালন করলেও ধীরে ধীরে তা সামাজিক রূপ ধারণকরে। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে তৎকালীন আহলুস সুন্নাত ওয়াল জাম’আতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করতে পারেননি। পরে যতদিন শিয়াদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল ততদিন এই দুই দিবস নিয়মিত উদযাপন করা হয়, যদিও তা মাঝেমাঝে শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে ভয়ংকর সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]