[et_pb_section fb_built=”1″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_row _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_column type=”4_4″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_text _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” text_text_color=”#2c3e50″ text_font_size=”16px” global_colors_info=”{}”]
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফতের ক্রমাবনতি ও পতন:
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনের ঐতিহাসিক কারণ: উথান, বিকাশ ও পতন, এ প্রাকৃতিক বিধান, ব্যক্তি ও জাতির জীবনে সমভাবেই প্রশে মতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে, একটি রাজবংশ বড়জোর মাত্র এক শ বছর এর কর্মশক্তি এবং শৈার্য-বীর্য বজায় রাখতে পারে। তারপরই এর অবনতি ও বিলোপ পালা শুরু হয়। আব্বাসি বংশের বেলায়ও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নি। যদিও এ বংশ (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) ৫০০ বছরের অধিককাল – অধিষ্ঠিত ছিল—এ বংশের প্রকৃত গৌরব ও প্রতিপত্তি আল-ওয়াসিকের (৮৪২-৪৭ খ্রি.) খিলাফতকাল পর্যন্ত বর্তমান ছিল। তাঁর পরবর্তী উত্তরাধিকারিগণ শুধু নামেমাত্র ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসি মসনদে সমাসীন ছিলেন; কার্যত তাদের কোনো ক্ষমতাই ছিল না। আব্বাসি বংশের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় এর পতন হয়েই বিস্ময়ের কিছুই নেই। এতদসত্ত্বেও আরও কতকগুলো কারণে আব্বাসি বংশের পতন ঘটেছিল,
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে পরবর্তী শাসকদের অযোগ্যতা:
আব্বাসি বংশের সর্বমোট সাইত্রিশ জন খলিফার মধ্যে প্রথম দিকের কয়েকজন খলিফা বিশেষ করে মনসুর, মাহদী, হারুন ও মামুন বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পরাক্রান্ত শাসকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তারা অসাধারণ শাসন দক্ষতা এবং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু মুতাসিমের পরবর্তী অধিকাংশ খলিফাই অযোগ্য, অকর্মণ্য এবং দুর্বল ছিলেন। আল-থালিবি বলেন, “আল-মনুসর আব্বাসি বংশের গৌরবের সূচনা করেন, আল-মামুন এটা পরিপূর্ণ করেন এবং আল-মুতাদিদের (৮৯২-৯০২) আমলে এর অবসান ঘটে। পরবর্তী অযোগ্য খলিফাগণ শাসনকার্যের প্রতি উপেক্ষা ও অবহেলা প্রদর্শন করে ভোগবিলাসে মত্ত থাকতেন। ফলে, সাম্রাজ্যে অরাজকতা দেখা দেয়, সৈন্যবাহিনী উচ্ছল হয়ে ওঠে এবং কুচক্রী ও স্বার্থপর আমীর ওমরাহগণের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে আব্বাসি সাম্রাজ্য পতনের দিকে দ্রুত ধাবিত হতে থাকে।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, সাম্রাজ্যের অধিক বিস্তৃ :
আব্বাসি সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর হতে সিন্ধু নদ এবং কাস্পিয়ান সাগর হতে নীল নদ পর্যন্ত বিস্তৃত সাম্রাজ্যের অধিক ছিল। তখনকার দ্রুতগামী যানবাহনহীন যুগে দুই মহাদেশব্যাপী এত বড় সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষা করা দুর্বল খলিফাগণের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। কোনো কোনো দেশ নামমাত্র বিজিত হয়েছিল এবং সেসব দেশে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়নি। কাজেই ঐ সমস্ত দেশে বিচ্ছিন্নতার সম্ভাবনা সব সময় বিদ্যমান ছিল। তা ছাড়াও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা অবহিত হওয়া ও সৈন্য পরিচালনা করে তার দ্রুত প্রতিবিধান করা সম্ভবপর ছিল না।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা:
খলিফার দুর্বলতার সুযোগে দশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন বংশীয় নেতা ও দলপতিগণ আব্বাসি খিলাফতের বিভিন্ন স্থানে নিজেদের কতকগুলো স্বাধীন বংশ প্রতিষ্ঠা করেন ( যথা—ইদ্রিসীয় বংশ, সামানীয় বংশ, বুওয়াইয়া বংশ , সেলজুক বংশ, ফাতেমীয় বংশ ইত্যাদি)। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঐরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের অভ্যুত্থান সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। এই দুর্দিনে দুর্বল খলিফাদের পক্ষে সামাজ্যের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা মোটেই সম্ভব ছিল না। আব্বাসি সাম্রাজ্যের দুরবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক পি, কে, হিট্টি বলেন, “রোগী ইতিপূর্বেই মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিল, তা টের পেয়ে সিঁদেল চোর দরজা ভেঙ্গে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং রাজকীয় সম্পত্তি হতে স্ব স্ব অংশ কেড়ে নেয়।”
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে সামরিক বিভাগের প্রতি অবেহেলা:
উমাইয়া যুগ ছিল বিজয়ের যুগ আর আব্বাসি যুগ ছিল কৃষ্টি ও সভ্যতার যুগ। আব্বাসি বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ খলিফাগণও রাজ্য বিজয় অপেক্ষা সাম্রাজ্যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে বেশি যত্নবান ছিলেন। ফলে সামরিক বিভাগের আব্বাসি খলিফাগণ সামরিক বিভাগের উপর বিশেষ নজর দেননি। এই বিভাগের প্রতি প্রতি অবহেলা খলিফাগণের অবজ্ঞা ও উদাসীনতার ফলে সৈন্যগণ শৌর্য-বীর্য এবং সামরিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। এবং যখন সাম্রাজ্য বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল, তখন আব্বাসি সৈন্যগণ সে আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, তুর্কি, বুওয়াইয়া ও সেলজুকের প্রাধান্য ও কলহ:
আব্বাসি খিলাফতের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল আরব চরিত্রের প্রতি খলিফাদের অশ্রদ্ধা এবং পারসিক, তুর্কি প্রভৃতি জাতির উপর শ্রদ্ধা ও অকুণ্ঠ আস্থা। এ কারণেই খলিফা মুতাসিম তুর্কি সৈন্যবাহিনী গঠন করে হাতে সম্পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করে মারাত্মক ভুল করেন। এ বাহিনী পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যের মধ্যে সর্বেসর্বা হয়ে উঠে এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশিমত খলিফা নির্বাচন ও অপসারণ করতে শুরু করে। তাদের সীমাহীন দৌরাত্মে আরব ও পারসিকগণ এবং জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাদের হাত হতে পরিত্রাণ পাবার আশায় পরবর্তী খলিফা আল-মুসতাকফি বুওয়াইয়াদের ডেকে আনেন। কিন্তু এতেও খলিফার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি ‘ছায়ামাত্র’ সিংহাসনে আরূঢ় ছিলেন। ক্ষমতালিপ্সু বুওয়াইয়া এবং তাদের পরে সেলজুক আমিরগণ নিজেদের মধ্যে কলহ ও দ্বন্দ্ব শুরু করে। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল আব্বাসি সাম্রাজ্য ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন সামন্ত প্রথা:
আব্বাসি খলিফাদের শাসন-কাঠামো ও ত্রটিপূর্ণ ছিল। তাদের শাসনামলে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ রাজস্ব ও সামরিক শাসন ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করত। ফলে, প্রদেশপালগণ ক্ষমতা এবং অজস্র অর্থ সঞ্চয় করে সুবিধামত কেন্দ্রের ক্ষমতা অস্বীকার করতেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে অনেক সময় বিদ্রোহী প্রাদেশিক সরকারের স্বাধীনতা মেনে নিতেন। এর উপর উত্তর আফ্রিকা ও খোরাসানের শাসন ব্যাপারে খলিফা হারুন সামন্ত প্রথার সৃষ্টি করে আর এক মারাত্মক ভুল করেছিলেন।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, উত্তরাধিকারী মনোনয়ন ব্যাপারে সুষ্ঠ নীতির অভাব:
খিলাফতে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় কোনো খলিফার ইন্তেকালের পরেই রাজসভায় দেখা দিত আত্মকলহ, দলাদলি, ষড়যন্ত্র এবং গুপ্তহত্যা। এটা সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব এবং সংহতির পরিপন্থী হয়ে দাড়িয়েছিল এবং আব্বাসি সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। এ প্রসঙ্গে খলিফা হারুন-অর-রশীদের পুত্রদ্বয় আমিন ও মামুনের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধ স্মরণীয়।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, দলগত শত্রতা ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎপত্তি:
যে হেজাজ-আরব এবং ইয়েমেন-আরবগণের মধ্যে দ্বন্দু উমাইয়া বংশের পতনের অন্যতম কারণ ছিল, তা আব্বাসি শাসনামলেও তদ্রুপ কুফল নিয়ে বিদ্যমান ছিল। এ ছাড়া এ যুগে আরব-অনারব, মুসলিম ও অমুসলমানদের দলগত বৈষম্য ও শত্রতা চরম আকার ধারণ করেছিল। আব্বাসি খিলাফতকালে ইরানিগণ শাসন ব্যাপারে ক্ষমতা লাভ করেছিল। সুতরাং ইরানিগণ আরবদেরকে ঘৃণা করত এবং আরবগণ ইরানিগণসহ সকল অনারব মুসলমানকে ঘৃণা করত। ফলে অনারব মুসলমানগণ ইরানিদের পতাকাতলে সমবেত হয়ে আরবদের উত্থানে সর্বতোভাবে বাধা প্রদান করতে থাকে। এ সকল বিরুদ্ধ শক্তি নিজ নিজ পথে চলে আব্বাসি সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে ফেলেছিল। আব্বাসি খিলাফতের চরম বিপর্যয়ের দিনেও মুসলমানগণ দলগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নি। এ ছাড়া এ যুগে শিয়া , সুন্নী , কারমাথিয়ান , মুতাজিলা, ইসমাইলী , এসাসিন (Assassin) প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব এবং তাদের বিরোধমূলক মতবাদ আব্বাসি বংশের স্থায়িত্বের পরিপন্থী ছিল। এরা কোনো সময় পৃথকভাবে এবং কোনো সময় যুক্তভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপায়ে আব্বাসি বংশের পতনের জন্য কাজ করেছিল।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, নৈতিক অধঃপতন:
আরব শাসকশ্রেণী বিজিত রাজ্যের বিশেষ করে পারসিকদের বিলাসদুষ্ট জীবনধারা অনুসরণ করতে গিয়ে তাঁদের রক্তের বিশুদ্ধতা ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। অধিকন্তু অন্তঃপুর প্রথা , বিদেশি রমণীদের সাথে বিবাহ, অসংখ্য ক্রীতদাসী, উপপত্নী ও রক্ষিতা রাখার ব্যবস্থা এবং আমোদ-প্রমোদ ও মদ্যপানে মশগুল থাকায় তাঁদের পারিবারিক পরিবেশের জীবনীশক্তি কলুষিত হয়ে পড়েছিল। ফলে খিলাফতের সিংহাসনে আরোহণের জন্য শক্তিহীন, ব্যক্তিত্বহীন ও অর্বাচীন উত্তরাধিকারীর জন্ম হতে লাগল। এ সকল দুর্বল ও বিলাসী উত্তরাধিকারীদের পক্ষে বিশাল রাজ্যের শাসনরজ্জু সংযত রাখা সম্ভবপর হয়নি।
ড ইমামদ্দীনের মতে, স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, সীমাহীন ভোগ-বিলাস ও যথেচ্ছাচার আব্বাসিদের পতনে প্রধা কারণ। জনসমর্থনহীন কোনো সরকারই শুধু সমরশক্তির উপর নির্ভর করে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না এ কথা কালক্রমে আব্বাসিগণ ভুলে গিয়েছিল। অথচ ততদিনে তাদের পার্থিব ও সামরিক শক্তিও বহুলাংশে হ্রাস পেয়ে গিয়েছে।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, অর্থনৈতিক বিপর্যয়:
খিলাফতের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও আব্বাসি বংশের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। শাসকগোষ্ঠীর ভোগ-বিলাসের জন্য প্রজাদের উপর নিত্য নতন করভার চাপিয়ে দেয়া হত। অতিরিক্ত করভারে জর্জরিত প্রজাসাধারণের অনেকে কৃষিকার্য ছেড়ে দিয়েছিল। শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারে দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যও অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এরূপে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ক্রমশ শিথিল হয়ে যায় এবং সমগ্র জাতি দুর্গতির কবলে পতিত হয়। অধিকন্তু দুর্ভিক্ষ এবং কমপক্ষে ৪০ বারের মহামারীতে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় ও মর্মান্তিক হয়ে পড়েছিল। এ অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধ করার শক্তি ও ইচ্ছা পরবর্তী আব্বাসি খলিফাদের ছিল না।
(abbasi-khilafat): আব্বাসি খিলাফত পতনে, প্রতক্ষ কারণ: ১২৫৮ খ্রি. হালুক খান কর্তৃক বাগদাদ আক্রমণ , লুণ্ঠন:
আব্বাসি বংশের পতনের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণ। ১২৫৩ -খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে শেষ আব্বাসি খলিফা মুসতাসিমের (১২৪২-৫৮ ) নিকট সাহায্য কামনা করে একটি পত্র প্রেরণ করেন। হতভাগ্য খলিফা তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ উত্তর প্রদান করেন। এতে ক্রোধান্বিত হয়ে হালাকু খান একাকী গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ সাধন করে ১২৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাগদাদ অভিমুখে অভিযান পরিচালনা এবং শেষ খলিফাকে হত্যা করেন। খলিফার বাহিনী দুবার পরাজিত হয়ে নগরাভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে। মোঙ্গল বাহিনী ৪০ দিন ধরে অবরোধ চালায় এবং তারা বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড এবং জ্বলন্ত অগ্নি (ন্যাপথা) নগর প্রাকারে নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে নগর প্রাকার ধসে পড়ে। নিরুপায় খলিফা মুসতাসিম হালাকুর নিকট আত্মসমর্পণ করে প্রাণভিক্ষা প্রার্থনা করেন। কিন্তু হালাকু অত্যন্ত নিষ্ঠরভাবে খলিফা ও রাজপরিবারের সকলকে হত্যা করেন (ফেব্রুয়ারি, ১২৫৮)। আক্রমণের পূর্বে বাগদাদের জনসংখ্যা ছিল ২০ লক্ষের অধিক। ইবনে খালদুনের মতে নরশার্দুল মোঙ্গলগণ নির্মমভাবে ছয় সপ্তাহ ধরে লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ষোল লক্ষ নর-নারী, বৃদ্ধ ও শিশুকে কেটে অথবা পিষে মেরে ফেলেছিল। কথিত আছে যে, তিন দিন ধরে নগরীর রাজপথগুলোতে রক্তস্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং দজলার পানির গতিপথে বহু মাইল পর্যন্ত রক্ত রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল। তারা প্রাসাদ, মসজিদ, সমাধিসৌধ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভস্মীভূত করে ফেলে। “শিক্ষার আগার, সভ্যতার ক্ষেত্র এবং সারাসিন জগতের চক্ষু ও কেন্দ্রভূমি চিরতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হল।” এভাবে ৫০০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আহরিত শিল্প সাহিত্য মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। খলিফা মুসতাসিমের হত্যার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম জগতে এমন আর কোনো খলিফা রইলেন না যাঁর নাম শুক্রবারের খুৎবায় উচ্চারণ করা যায়। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর বলেন। “তাতারদের আক্রমণ সাধারণভাবে সমগ্র বিশ্বের উপর এবং বিশেষভাবে মুসলমানদের উপর আপতিত সর্ববৃহৎ বিপর্যয়সমূহের ও সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ দৈব দুর্বিপাকগুলোর অন্যতম। পরবর্তী যুগে এরূপ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়নি।”
আধুনিক ঐতিহাসিক বার্ণাড লুইস এ বক্তব্য গ্রহণ করেন না। তাঁর মতে, খিলাফত তখন মৃতপ্রায়, খলিফাগণ তাদের পার্থিব ক্ষমতা ও ধর্মীয় সুবিধাগুলো হারিয়ে সুলতান ও আমীরদের হাতে ক্রীড়নক হয়ে পড়েছিলেন। সুতরাং মোঙ্গলগণ একটি মৃত প্রতিষ্ঠানের ভূতকেই ধ্বংস করেছিল। সম্ভবত এ কারণেই মুস্তানসিরিয়া মাদাসার মুফতিগণ হালাকু খানের শাসন কর্তৃত্বকে বৈধ বলে মেনে নিয়েছিলেন।
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]