উসমান (রা.) এর শাহাদাত

উসমান (রা.) এর শাহাদাতের কারণ ও ফলাফল আলােচনা কর।

[et_pb_section fb_built=”1″ _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_row _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_column type=”4_4″ _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_text _builder_version=”4.16″ text_text_color=”#000″ text_font_size=”16px” global_colors_info=”{}”]উপস্থাপনা : ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান(রা)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার হত্যাকাণ্ড ছিল ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা।

মূলত ইসলামী ইতিহাসে এটিই ছিল সর্বপ্রথম গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহীগণ কর্তৃক একজন খলিফার হৃদয়বিদারক প্রাণনাশ। এ হত্যার ফলাফল ব্যক্ত করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ওয়েল হাউসেন বলেন:

Table of Contents

হযরত উসমান (রা)-এর হত্যা :

বহু অসন্তোষ ও বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে বিদ্রোহীরা কুফা, বসরা ও মিসরের গভর্নরকে পদচ্যুত করার জন্য খলিফাকে চাপ দিতে থাকে।

খলিফা তাদের দাবি মেনে নিলে বিদ্রোহীরা স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেতে থাকে।

কিন্তু পথিমধ্যে মারওয়ানের চক্রান্তে লিখিত খলিফার মোহরাঙ্কিত একটি জালপত্র তাদের হস্তগত হয়। এতে নির্দেশ ছিল, বিদ্রোহীরা কুফায় পৌছামাত্র তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে বিদ্রোহীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় মদিনায় ফিরে আসে এবং মুহাম্মদের নেতৃত্বে জোরপূর্বক ওসমানের গৃহে প্রবেশ করে নামাযরত অবস্থায় তাকে হত্যা করে। খলিফার স্ত্রী নায়েলা খলিফাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার হাতের আঙুল হারান। হিট্টি বলেন, এরূপে মুসলমানদের দ্বারা রক্তপাতে নিহত তিনিই প্রথম খলিফা।

হযরত উসমান(রা)-এর এর শাহাদাতের কারণ:

১. হাশেমী ও উমাইয়া দ্বন্দ :

হাশেমী ও উমাইয়াদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধই খলিফা উসমান(রা)-এর ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। হযরত উসমানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা উমাইয়াদের হাতে চলে যাওয়ায় হাশেমীগণ ঈর্ষানিত হয়ে খলিফা উসমান  (রা)-এর বিরুদ্ধে শত্রুতা আরম্ভ করে। তাই ঐতিহাসিক আমীন বলেন হযরত ওসমানের সময়ে হাশেমী এবং উমাইয়া গোত্রের মধ্যে যে চরম শত্রুতা আরম্ভ হয় তা এক শতাব্দীর অধিককাল অব্যাহত ছিল।

২.  কুরাইশ অকুরাইশ অসন্তোষ :

কুরাইশ অকুরাইশ দ্বন্দ খলিফা উসমান(রা) এর হত্যা তরান্বিত করে। অকুরাইশরা যখন দেখতে পেল, কুরাইশরা সর্বক্ষেত্রে কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে,তখন অকুরাইশরা উসমান(রা)-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে। এমতাবস্থায় ওসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কেন্দ্রস্থল বসরা, কুফা ও পুসতাতে কুরাইশ অকুরাইশদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার ধারণ করে।

৩. কেন্দ্রীয় শাসনের শৈথিল্য:

ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, কেন্দ্রীয় শাসন শৈথিল্যের ফলেও ওসমানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে  বার্নার্ড লুইস ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ হয়েছিলো কোনো ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত কারণে হয়নি; বরং এ বিদ্রোহ হয়েছিল কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে যাযাবরদের বিদ্রোহ।

৪. অনারবদের অসন্তোষ :

খলিফা ওসমান (রা)-এর শাসনামলে কুরাইশদের লোভনীয় সুযোগ সুবিধা ও প্রতিপত্তিতে অনারব মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ ঈর্ষান্বিত হয়ে হঠে ।  হযরত ওসমান (রা)-এর সরলতার সুযোগে তারা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে  তার বিরোধী চক্রের সাথে যোগ দেয় এবং তাদের সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করে। ফলে হযরত ওসমান (রা) তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তারা বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে।

See also  সিফফিনের যুদ্ধ: হযরত আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ।

৫. ইবনে সাবার অপপ্রচার :

আবদুল্লাহ ইবনে সাবা নামে এক ইয়েমেনী ইহুদি ইসলাম গ্রহণ করে নিজ স্বার্থসিদ্ধি তথা ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার জন্য বসরা, কুফা ও মিসরে গমন করে অপপ্রচার চালায় যে, হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতে প্রবেশ নীতিবহির্ভূতভাবে হয়েছে। মূলত খেলাফতের যোগ্য হচ্ছেন হযরত আলী (রা) । ঐতিহাসিক ইমামুদ্দিন বলেন, তার প্রচারণাই ধর্মীয়রূপ পরিগ্রহ করলে পারস্যভাবাপন্ন। এবং উত্তরাধিকার সূত্রে রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ইরাকের আরব গোত্রগুলোর অনেকেই এ কথার সমর্থন করে।

৬. খলিফা উসমান এর সরলতা ও উদারতা :

ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, খলিফা হযরত ওসমানের সরলতা ও উদারতা তাঁর বিপর্যয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী। কারণ তিনি রাষ্ট্রের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কঠোর ও বলিষ্ঠ নীতি অবলম্বন না করে উদারতা প্রদর্শন করতে থাকেন। এই মানবিক আচরণকে বিদ্রোহিরা দুর্বলতা মনে করে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে সাহসী হয় এবং পরিশেষে তাঁকে হত্যা করে।

৭. স্বজনপ্রীতির কল্পিত অভিযোগ :

হযরত ওসমান (রা) কতিপয় প্রাদেশিক শাসনকতাকে পরিবর্তন করে নিজ আত্মীয়স্বজনকে তথায় নিয়োগ করেন,

তাদেরকে সরকার, এবং বিজিত অঞ্চলের জমি প্রদান করেন বলে এক শ্রেণির মতলববাজ লোক কাল্পিত অভিযোগ উত্থাপন করে।

৮.  কুরআন মাজীদ দিগ্ধীভূতকরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ :

হযরত ওসমান (রা) সময় ইসলামী রাষ্ট্রের বিপুল বিস্তৃতি ঘটলে কোনো কোনো স্থানে কুরআন পাঠে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ায় তিনি যায়েদ ইবনে সাবেত (রা)-এর নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করে হযরত হাফসা (রা)-এর কাছে রক্ষিত কুরআনের পাণ্ডুলিপি অনুসরণে  নতুন অনুলিপি তৈরি করে বাকিগুলো পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

স্বার্থান্বেষী মহল এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের একাংশকে বিভ্রান্ত করে।

৯. বায়তুলমালের অর্থ অপচয়ের কল্পিত অভিযোগ :

হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতকালে এক শ্রেণির মতলববাজ লোক রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদ অপব্যয়, অপচয় এ আত্মসাতের কল্পিত অভিযোগ উত্থাপন করে।

এ ভিত্তিহীন কল্পিত অভিযোগ পরবর্তীতে খলিফা হত্যার মতো দুঃখজনক পরিস্থিতির কারণ হয়।

১০. প্রাসাদ নির্মাণের অপবাদ :

হযরত উসমান (রা) ইসলামী খেলাফতের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য একটি সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করায় এক দল লোক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর উদ্দেশ্যে জোট গঠন করে, অথচ এ কাজ মোটেই অপচয়ের শামিল হতে পারে না।

১১.  আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে বৈষম্য :

হযরত উসমান(রা)-এর খেলাফতকালে আনসারগণের তুলনায় মুহাজিরগণ অবহেলিত ছিলেন এবং তাঁরা মজলিসে শূরার খাস বা বিশেষ পরিষদের সদস্য পদ হতে বঞ্চিত হতেন।

আনসার ও মুহাজিরগণের মধ্যে।

বৈষম্য ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে এবং হযরত ওসমানের শাসনামলে এটা আরো ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করে। ফলে তাঁকে শাহাদাতবরণ করতে হয়।

১২. মারওয়ানের ধ্বংসাত্মক নীতি :

মহানবী (স) কর্তৃক মদিনা হতে বহিষ্কৃত মারওয়ান ইবনুল হাকামকে হযরত ওসমান (রা) রাষ্ট্রপ্রধানের সেক্রেটারি নিয়োগ করেন।

ঐতিহাসিক তাবারীর মতে মারওয়ানের কূটনীতি, অপকর্ম, বয়োজ্যষ্ঠ সাহাবীগণের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ খলিফা ওসমান হত্যার প্রধানতম ঘটনা।

খলিফার স্ত্রী নায়েলাও এ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

১৩. আবু যর গিফারীর নির্বাসন :

হযরত আবু যর গিফারী (রা) ছিলেন অতিমাত্রায় দুনিয়াবিমুখ মানুষ।

তার অর্থনৈতিক দর্শন ছিল- মৌল মানবীয় প্রয়োজনের অধিক অর্থসম্পদ কেউ জমা রাখতে পারবে না।

See also  হযরত উমার (রা.) কখন এবং কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন ? উমার (রা.) এর খিলাফতকালে মিসর বিজয় সম্পর্কে আলােচনা কর।

তার এ অর্থনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে হযরত ওসমান (রা)-এর সাথে মতবিরোধের সৃষ্টি হলে তিনি স্বেচ্ছায় রাবাযা নামক পল্লি এলাকায় বসবাস করতে থাকেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

এমন একটা সহজ সরল বিষয়কেও এক শ্রেণির উদ্দেশ্যবাদী লোক খলিফার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মোক্ষম হাতিয়াররূপে ব্যবহার করে।

১৪. প্রাদেশিক ওয়ালীর পরিবর্তন :

প্রাদেশিক ওয়ালী পরিবর্তনকেও অনেকে ওসমান (রা)-এর হত্যাকাণ্ডের কারণ বলে মনে করেন।

তিনি মারওয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী মিসরের ওয়ালী আমর ইবনুল আস (রা)-এর স্থলে আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারহ (রা)-কে নিয়োগ করেন। বসরার ওয়ালী আবু মুসা আশয়ারী (রা)-এর স্থলে আবদুল্লাহ ইবনে আমর এবং কুফার ওয়ালী ওয়ালিদ ইবনে ওকবার স্থলে সাঈদ ইবনুল আস (রা)-কে নিযুক্ত করেন।

১৫. আদর্শবান পুরুষের অন্তর্ধান :

মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ বলেন, মহানবী (স) ও তাঁর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু বকর, ওমর, আবু ওবায়দা, খালেদ, বেলাল (রা) প্রমুখ যারা মুসলিম রাষ্ট্রের শক্তি স্তম্ভস্বরূপ ছিলেন এবং যাদের বিরাট ব্যক্তিত্ব ও অপূর্ব ত্যাগ। ইসলামে নব-দীক্ষিত জাতিসমূহের সম্মুখে বিস্ময়, সম্ভম ও সমীহের কারণ ছিল, তাদের ইন্তেকালে হযরত ওসমান (রা) অসহায় হয়ে পড়েন।

তাঁদের অনুপস্থিতি আরব উপদ্বীপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সহায়ক হয়। ফলে হযরত ওসমান (রা)-এর নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

১৭. হিমাবাইট ও মুযারাইটদের ঈর্ষাভাব :

ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন,

হিমারাইট ও মযারাইটদের পুরাতন ঈর্ষাভাব সাময়িকভাবে দূরীভূত হলেও পুনরায় তা ইসলামের  জন্য মারাত্মক পরিণতিসহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

হযরত মুহাম্মদ(স) এবং দু’খলিফা এই দুগোষ্ঠিকে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন।

বস্তুত মদিনা ব্যতীত আরবের অন্য কোথাও এ দু’জাতির লোক একত্রিত হতে পারেনি।  বংশগৌরব ও কৌলীন্য প্রথা উত্তর আরব বা মুযারাইট এবং দক্ষিণ আরব বা হিমারাইটদের মধ্যে একটি পর্বতপ্রমাণ ব্যবধান সৃষ্টি করে।

খলিফা ওসমানের খেলাফতে এসব দ্বন্দ কোলাহল ও অসন্তোষ মারাত্মক আকার হরণ করে।

১৮. দ্বীন ও মাওয়ার মধ্যে দ্বন্দ :

এন. এ. ফারিসের মতে,

হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতে পৌত্তলিক মক্কার প্রাচীন অভিজাতবর্গ এবং ইসলামের নতুন অভিজাতবর্গের মধ্যে দ্বন্দু পরিলক্ষিত হয়।

পুরাতন অভিজাতবর্গ প্রাচীন ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং নতুন অভিজাতবর্গ ইসলামের ভ্রাতৃত্ব এবং সকল মুসলমানের মাঝে সমতা রক্ষা করার জন্য তৎপর থাকে,

কিন্তু হযরত ওসমান (রা) কঠোর হস্তে প্রাচিন আভিজাত্য পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার মৃত্যু অনিবার্য  হয়ে উঠে

১৯. সৈন্যবাহিনীর বিরোধিতা :

ঐতিহাসিক বার্নার্ড লুইস বলেন,

হযরত ওসমান  শান্তিপ্রিয় ছিলেন। রাজ্য জয়ের অভিলাষ তার ছিল না, তাই যুদ্ধ পরিত্যক্ত সামগ্রী (গনীমত) লাভের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়ে সৈন্যবাহিনী খলিফার বিরোধিতা  করে । অথচ শান্তিপ্রিয়তা কোনো শাসকের অযোগ্যতার পরিচায়ক নয়। ইবনে খালদুন  বলেন, হযরত ওসমান (রা) গনীমত সঞ্চয়ের জন্য সৈন্যদের প্রতি দোষারোপ করেননি। কেননা এগুলো ছিল আইনসিদ্ধ সম্পদ।

হযরত উসমান (রা)-এর হত্যার ফলাফল :

১. কলুষিত অধ্যায়ের সূচনা :

খলিফা উসমান (রা)-এর শাহাদাতবরণ ইসলামের ইতিহাসে একটি কলুষিত অধ্যায়ের সূচনা করে।

এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী এবং মারাত্মক। প্রখ্যাত জার্মানি ঐতিহাসিক ওয়েল হাউসেন বলেন, ওসমানের হত্যাই ইসলামের ইতিহাসের যে কোনো ঘটনা অপেক্ষা অধিকতর যুগান্তকারী।

এর ফলে বহুমুখী প্রতিক্রিয়া ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বত্র দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রীয় সংহতির স্থলে অরাজকতার সূচনা করে।

২. খেলাফতের পবিত্রতা নষ্ট :

হযরত ওসমান (রা)-এর শাহাদাতের ফলে খলিফা ও খেলাফতের প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধা ভক্তি ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ে।

See also  মহানবী (সা.) এর নবুওয়াতের অভিষেক দিবস।

খোদা বখশ হযরত ওসমানের নৃশংস হত্যাকে একটি অভাবনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে অভিহিত করেন এবং বলেন,

“এটা সর্বকালের জন্য খেলাফতের পবিত্রতা বিনষ্ট করে ——।”

একই কথার প্রতিধ্বনি করে বার্নার্ড লুইস বলেন, বিদ্রোহী কর্তক একজন খলিফার প্রাণহানিতে বেদনাবিধুর দৃষ্টান্তের সৃষ্টি হয় এবং তা ইসলামী ঐক্যের প্রতীক খেলাফতের নৈতিক মর্যাদা মারাত্মকভাবে দুর্বল করে।

৩. গৃহযুদ্ধের সূচনা :

হযরত উসমান(রা)-এর হত্যাকাণ্ডের ফলে মুসলমানদের এ সংহতি বিনষ্ট হয়। সর্বোপরি মুসলমান কর্তৃক মুসলমানের রক্তপাত তথা হযরত ওসমান (রা)-এর মতো নিরীহ প্রবীণ সাহাবী হত্যা হতে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসে সংঘাতপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়। হযরত আলী (রা)-এর খেলাফতে সিফফিন ও উষ্ট্রের যুদ্ধ বিশেষ করে কারবালার হত্যাকাণ্ড হযরত উসমান(রা) এর নির্মম হত্যারই প্রতিফলন। তাই জোসেফ হেল বলেন-

The Murder of was a signal for civil war.

৪. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব :

ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, হযরত উসমান হত্যার পর মদিনা ভিন্ন সমগ্র রাষ্ট্রে দুটি খেলাফতের সৃষ্টি হয়। এ হত্যা ইসলামের একতা বিনষ্ট হয় এবং মুসলিম জাতি শিয়া, সুন্নী, খারেজী, রাফেজী,জাবারিয়া, কাদারিয়া, মুতাযিলা, ইখওয়ানুস সাফা প্রভৃতি ফেরকা বা উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক নিকলসন বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় ইবনে সাবার প্রচারণা হতে।।

৫. গণতন্ত্রের সমাধি রচনা :

হযরত উসমান (রা)-এর মর্মান্তিক মৃত্যু প্রকারান্তরে গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ আন্দোলনের পতন।

প্রথম দু’খলিফা ইসলামের মূল আদর্শ রক্ষা করতে সক্ষম হন, কিন্তু চক্রান্তমূলক অভিসন্ধির শিকার হয়ে খলিফা ওসমান (রা) শাহাদাতবরণ করলেন।

খোদা বখশের ভাষায়, এটা স্রষ্টাতন্ত্রকে রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত করে।

৬. মুসলিম ঐক্যে ফাটল :

এ অচিন্তনীয় ঘটনা মুসলিম জাতিকে বনু হাশেম ও বনু উমাইয়া এ দুটি প্রধান দলে বিভক্ত করে।

ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধ আরব গোত্রীয় চেতনা ধ্বংস করে ইসলামী রাষ্ট্রকে সুসংবদ্ধ করে, কিন্তু উমাইয়াদের প্ররোচনায় বনু হাশেম গোত্রের প্রাধান্য বিলুপ্ত হয়।

পরিশেষে মুয়াবিয়া (রা) কর্তক খেলাফত অধিকৃত হয়।

৭.  জোর যার মুল্লুক তার :

মহানবী (স)-এর জীবনী লেখক আল্লামা শিবলী নোমানী (র) বলেন,

হযরত উসমান(রা)-কে হত্যার ফলে আরব ভূমিতে অজ্ঞতার যুগের ন্যায় রক্তক্ষয়ী ‘জোর যার মুল্লুক তার নীতি চালু হয় এবং অস্ত্রবলই যেন রাষ্ট্র ক্ষমতার উত্তরাধিকারিত্বের প্রশ্ন মীমাংসাকারী।

অপরদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ফলে হত্যাকারীদের কবল থেকে পরবর্তী খলিফাকে রক্ষা করার জন্য দেহরক্ষী নিযুক্ত করা হয়।

৮.  মদিনার প্রাধান্য বিলুপ্ত :

খলিফার হত্যার পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রাজধানী মদিনার প্রাধান্য ও গৌরব লোপ পেতে থাকে। নবপ্রতিষ্ঠিত শহর কুফা, দামেশক, ফুসতাত, বসরা প্রভৃতি ইসলামের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, হযরত আলী (রা) সাময়িকভাবে কুফায় রাজধানী এবং হযরত মুয়াবিয়া (রা) দামেশকে উমাইয়া সাম্রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন।

৯. উমাইয়াবিরোধী শত্রতা :

উমাইয়া খেলাফতে বনু হাশেম গোত্রকে যেভাবে বিকৃতরূপে চিত্রিত করা হয়,

পরবর্তীকালে আব্বাসীয় খলিফাগণও ঈর্ষা ও বিদ্বেষবশত উমাইয়া শাসনকালকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেন।

এ প্রসঙ্গে মুর বলেন, প্রচলিত অধিকাংশ কাহিনীতে ফরমান লেখা ও মোহরযুক্ত করার দায়িত্ব খলিফার গোত্র সম্পর্কিত ভ্রাতা মারওয়ানের ওপর ন্যস্ত ছিল।

এসবই যাবতীয় দুর্ভোগের কারণ বলে তাঁকে দোষারোপ করা হয়েছে।

অথচ এসবে স্পষ্টত আব্বাসীয় বংশ কর্তৃক উমাইয়াবিরোধী সংস্কারের ছাপ রয়েছে।

১০. প্রতিহিংসার জন্ম :

ঐতিহাসিক আমীর আলী এবং হিট্টি বলেন, খলিফা হযরত উসমান(রা)-এর হত্যাকে কেন্দ্র করে আরবদের মাঝে আবার প্রতিহিংসার অনল দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।

সমাজজীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে বহু আরব গোত্র মাতৃভূমি ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে বসবাসের জন্য চলে যায়।

১১. মদিনাতুন্নবীর প্রভাব লোপ :

মাওলানা মুহাম্মদ আলী বলেন, মদিনাতুন্নবীতে এহেন অবাঞ্ছিত ঘটনার পর হযরত আলী (রা) পরবর্তীতে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেন।

ফলে মহানবী (স) ও খোলাফায়ে রাশেদার কর্মের প্রাণকেন্দ্র বিশ্বব্যাপী প্রভাব সৃষ্টিকারী মদিনা নগরীর প্রভাব বিলুপ্ত হয়ে কুফা নগরীর প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

১২. হযরত আলী (রা) খলিফা নির্বাচিত:

ঐতিহাসিক মুর বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পর বিদ্রোহী ওসমান হন্তারা অনেকটা জোরপূর্বক হযরত আলী (রা)-কে খলিফা নির্বাচিত করে এবং এ সময়ে কার্যত মদিনা রাষ্ট্র দুটি খেলাফতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

উপসংহার :

ইসলাম মানবতাকে শ্রেণিহীন শোষণহীন শান্তি শৃঙ্খলাময় যে সোনালি সমাজব্যবস্থা উপহার দিয়েছিল,

উসমান(রা)-এর হত্যাকাণ্ড সে সোনালি যুগের অবসান ঘটায়। তাই এর সুদূরপ্রসারী গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে ঐতিহাসিক ওয়েল হাউসেন বলেন-

The Jenusgate of civil war was opened and never again closed.
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]