শবে কদর

‘শবে কদর’ এর ফজিলত ও আমল

[et_pb_section fb_built=”1″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_row _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_column type=”4_4″ _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” global_colors_info=”{}”][et_pb_text _builder_version=”4.16″ _module_preset=”default” text_text_color=”#2c3e50″ text_font_size=”16px” header_2_text_color=”#2c3e50″ header_2_font_size=”18px” text_font_size_tablet=”” text_font_size_phone=”15px” text_font_size_last_edited=”on|desktop” header_2_font_size_tablet=”” header_2_font_size_phone=”16px” header_2_font_size_last_edited=”on|desktop” global_colors_info=”{}”]

‘শবে কদর’ এর পরিচয়:-

 

‘শবে কদর’ শব্দদয় ফারসি শব্দ । ‘শব’ মানে রাত বা রজনী, আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা ও ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত।

মর্যাদার এক রাত শবে কদর। কুরআনের ভাষায় এটিকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়। এ রাতের মর্যাদায় আল্লাহ তাআলা ‘সুরা আল-কদর’ নামে একটি সুরা নাজিল করেছেন। আর এ রাতেই আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। এ রাত ও কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে মহান আল্লাহু সোবহানাহু তায়ালা  বলেন :  ‘নিশ্চয়ই আমি তা (অর্থাৎ কুরআনে) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জান? শবে কদর হলো- এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। শান্তি আর শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত (নাজিল হতে) থাকে।’ (সুরা আল-কদর)

মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত। (আল কোরআন, (সুরা-৯৭ আল কদর, আয়াত: ১-৫)। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি ‘শবে কদর’ নামেই সমধিক পরিচিত।

‘শবে কদর’ এক মর্যাদার রজনীর নাম:-

কোরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আসমানি এক শ সহিফা, চারখানা কিতাবসহ মোট এক শ চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআনই সেরা। কারণ, এই কিতাব নাজিল হয়েছে আখেরি নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, নবীগণের ইমাম, রাসুলদের সরদার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা (সা.)-এর প্রতি। এই কোরআনের স্পর্শ বড়ই সৌভাগ্যের। হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম এই কোরআন বহন করেই ফেরেশতাদের সরদার হওয়ার গৌরব লাভ করেছেন। মরুর দেশ ‘জজিরাতুল আরব’ এই কোরআনের স্পর্শেই পবিত্র আরব ভূমির সম্মান লাভ করেছে। অলক্ষুনে ও দুর্ভোগময় খ্যাত ‘ইয়াসরিব (বর্তমান নাম মদিনা)’ ।

See also  সিফফিনের যুদ্ধ: হযরত আলী (রা.) ও মু'আবিয়া (রা.) এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ।

এই মহা গ্রন্থ আল কোরআনের বরকতেই পুণ্য ভূমি ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র সম্মানে ধন্য হয়েছে। তাগুতের আখড়া পাপের আকর শিরক ও কুফরের শীর্ষ তীর্থস্থান ‘বাক্কা’ এই কোরআনের তাজাল্লিতে পবিত্র মক্কা নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই কোরআনের পরশে স্বল্পমূল্য কাপড়ের ‘গিলাফ’ বুকে জড়ানোর সম্মান পাচ্ছে। এই কোরআনের ছোঁয়ায় সাধারণ কাঠের ‘রেহাল’ সম্মানের চুমু পাচ্ছে।

 

‘শবে কদর’ এর ফজিলত:-

মর্যাদাপূর্ণ এ রাতে কুরআন নাজিল ও এর বরকত সম্পর্কে সুরা দুখানে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় (লাওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের কাছে) স্থিরিকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৬)।

 

মর্যাদার এ রাত সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি মোহাম্মদ  সা. গোনাহ মাফের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত লাইলাতুল কদর তথা (মর্যাদার নির্ধারিত রাত) জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি)

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বুঝা যায়, ‘লাইলাতুল কদর’ মর্যাদার একটি রাত। মর্যাদার এ রাতটি পেলে কী দোয়া পড়তে হবে, সে সম্পর্কেও এসেছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

অন্য হাদিসে এসেছে-হজরত আয়েশা (রা.)বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম-  হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) কোন রাতে ‘লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বা মহান মর্যদাপূ্রণ রাত’ হবে? তা যদি আমি জানতে পারি, তাতে আমি কোন দোয়াটি পড়বো বা কোন আমলটি করবো?

আপনি বলে দিন হযরত মহানবী (সা.) বললেন,   তুমি বলবে- اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

See also  ঈদে মিলাদুন্নবী ‘র প্রকৃত ইতিহাস।

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)।

‘শবে কদর’ এর দিনগুলো:-

তবে কোন দিন বা তারিখে আসে এ বরকতপূর্ণ রাত?মর্যাদার এ রাতটি কবে হয়ে থাকে  তা সুস্পষ্ট বা নির্দিষ্ট করে বলার বা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ কথাটি সুস্পষ্ট যে, তা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় যে কোনো রাতে হবে। সেই হিসাবে আলোকে তা হবে- ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাত। অর্থাৎ ২০ রমজান দিবাগত রাত, ২২ রমজান দিবাগত রাত, ২৪ রমজান দিবাগত রাত, ২৬ রমজান দিবাগত রাত এবং ২৮ রমজান দিবাগত রাত। মনে রাখতে হবে, আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতেও হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে- হযরত মহানবী সা. বলেছেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’ (বুখারি)।

২৭ রমজান শবে কদরতবে কেউ কেউ শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭ রমজান ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কেও একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা ২৭ রমাজনের রাতে অনুসন্ধান করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

মুহাক্কিকগণ বলেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ বা আরবি বর্ণ রয়েছে; আর সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই সাতাশে রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। (তাফসিরে মাযহারি)

অন্য যে রাতগুলোও সম্ভাবনাময় ২৭ই রমজানের রাত ছাড়া লাইলাতুল কদর পাওয়ার বেশি সম্ভাবনাময় রাতগুলো হলো- ২৫ই রমজানের রাত, ২৯ই রমজানের রাত, ২১ই রমজানের রাত ও ২৩ ই রমজানের রাত।

‘শবে কদর’ এর রাতটি যেমন হবে:-

লাইলাতুল কদরের বিশেষ নিদর্শন:- রাতটি বেশি অন্ধকার হবে না, গরম ও শীতের তীব্রতা থাকবে না। অর্থাৎ সুন্দর শান্তিদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করবে। মৃদু শীতল (বসন্তের) বাতাস প্রবাহিত হবে, সে রাতের ইবাদতে মানুষ বিশেষ তৃপ্তি অনুভব করবে, যা অন্য রাতের ইবাদতে অনুভূত হয় না। প্রকৃত ঈমানদার রোজাদার স্বপ্নে তা জানতে পারবে। সে রাতে রহমতের বারিধারায় (বৃষ্টিতে) সিক্ত হবে জমিন। পূর্ণিমার চাঁদের মতো হালকা আলোক রষ্মিসহ সূর্য উদয় হবে।’ (ইবনে খুযায়মাহ, বুখারি, মুসলিম)।

See also  উসমান (রা.) এর শাহাদাতের কারণ ও ফলাফল আলােচনা কর।

 

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর:-

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ইতিকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত ( কুরঅনা তেলোয়াত, নামাজ, জিকির ) করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪)।

 

শবে কদরের আমলসমূহ:-

শবে কদরের আমল হলো:
১. নফল নামাজ
২. তাহিয়্যাতুল অজু,
৩. দুখুলিল মাসজিদ,
৪. আউওয়াবিন,
৫. তাহাজ্জুদ,
৬.সালাতুত তাসবিহ
৭. তাওবার নামাজ,
৮. সালাতুল হাজাত,
৯. সালাতুশ শোকর ( শুকরিয়ার নামাজ)  ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।
১০. নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ  করা।
১১. কোরআন শরিফের  সুরা কদর,    সুরা মুয্যাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির,  সুরা ত-হা,  সুরা আর রহমান,সুরা দুখান,  ইয়া-সিন, ‍সুরা ফাতিহা ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা উত্তম।
১২. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;
১৩. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা;
১৪. দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা;
১৫. কবর জিয়ারত করা;

১৬. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।

কোরআনের সংস্পর্শে একটি সাধারণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ রজনীর সম্মানে বিভূষিত হয়েছে। কোরআনের সঙ্গে যার যতটুকু সম্পর্ক ও সংস্পর্শ থাকবে, তিনি ততটুকু সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং তাঁর খাস ব্যক্তি। (বুখারি শরিফ)। ‘যার অন্তরে কোরআনের সামান্যতম অংশও নেই, সে যেন এক বিরান বাড়ি।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।

[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]

1 thought on “‘শবে কদর’ এর ফজিলত ও আমল”

  1. Pingback: জো বাইডেনের সাথে ‘ফলবান, আন্তরিক’ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে:এরদোগান -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *