আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কী ও কেন? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো এআই, এটি আমরা অনেকেই জানি এবং সংক্ষিপ্ত রূপটি বহুল প্রচলিত। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি ইংরেজি শব্দ, আমরা যদি এটির বাংলা করি তাহলে হবে কৃতিম বুদ্ধিমত্তা। মানুষের বুদ্ধিমত্তার সাথে মিল রেখে প্রয়োজনীয় কাজ অথবা গবেষণা মূলক কিছু করতে সক্ষম এমন শক্তিশালী কম্পিউটার অথবা রোবটকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলে থাকে। আমরা এখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর আবিস্কার এবং ইতিহাস
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ১৯৪০ সালে। আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি এই শব্দ টি প্রথম পৃথিবীর সামনে আনেন। বর্তমানে আমরা যেসব এআই প্রুযুক্তি দেখি এর জনক তাকেই বলা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রয়োজনীয়তা থেকেই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উদ্বাবন। এর পর এটি নিয়ে কাজ করা শুরু হলেও ১৯৭০ সালে এটির প্রাপ্ত অর্থায়ন কমে যায়।
১৯৮০ সালে প্রথম আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জন্য বাণিজ্যিক ভাবে কাজ করা শুরু হয় এবং তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ করার কাজ করা হয়। ১৯৯০ সালে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি বিপ্লব দেখা যায়। এর পর থেকেই এর প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।
এটি নিয়ে অনেক কোম্পানি কাজ করতে থাকে। আমরা বর্তমানে এমন অনেক কিছু ব্যবহার করি যেগুলা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে তৈরি। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা অদূর ভবিষ্যতে এর অনেক উন্নতি দেখতে পাবো।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রকারভেদ
আমরা প্রধানত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তিন প্রকারের দেখতে পাই। নিচে প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
-
- Narrow AI- এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উপরেই কাজ করতে পারে।
- Artificial General Intelligence- মেশিন, কম্পিউটার অথবা রোবট যখন মানুষ সাদৃশ কাজ করতে পারে তাকে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বলে।
- Super Intelligence- এটি একটি অনেক শক্তিশালী একটি বুদ্ধিমত্তা। যা অনেক প্রতিভাবান এবং বুদ্ধিমান মানুষের ক্ষমতাকে অতিক্রম করে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার
বর্তমানে আমরা অনেক কিছুতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দেখতে পাই। বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যে ভিডিও গেম খেলি সেগুলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন আমরা অনেকেই Pubg অথবা Free Fire গেম এর সাথে পরিচিত এবং আমরা অনেকেই এসব গেম খেলি।
এখানে গেম গুলো তৈরির জন্য অনেক ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে কোডিং এর মাধ্যমে প্রতিটা চরিত্রকে আলাদা আলাদা কৃতিম বুদ্ধিমত্তা দেওয়া হয়। গেম ব্যবহার কারিদের চিন্তাভাবনা এবং কার্যকলাপের সাথে মিল রেখে চরিত্র গুলো কাজ করে।
এগুলো ছাড়াও অনেক বড়ো কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয় বর্তমানে। আমরা অনেকেই রোবট সুফিয়া এর ভিডিও দেখেছি অথবা এর কথা শুনেছি। রোবট সুফিয়া মানুষ সদৃশ দেখতে যা মানুষের জিজ্ঞেস করা প্রতিটা কথার উত্তর দিয়ে থাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন বহুমাত্রিক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করা হয়েছে যা পুরো ইন্টারনেট দুনিয়াকে পরিবর্তন করে দিতেছে। বেশ কিছুদিন পূর্বে ফেসবুক এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্স এর সাথে তার চিন্তা ভাবনার একটি সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আলাদা একটি ইন্টারনেট দুনিয়া বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন যা সম্পুর্ন্ন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে তৈরি হবে।
গুগল এর মতো প্রতিষ্ঠান তাদের জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনি যেসব বিষয় গুগলে সার্চ করবেন বলে ভাবতেছেন তা মাত্র একটা অথবা দুইটা শব্দ লেখার সাথে সাথেই গুগল আপনাকে পুরো লিখাটি সাজেস্ট করতেসে।
আমরা সবাই গুগল এবং ফেসবুক ব্যবহার করার সময় কিছু বিজ্ঞাপন দেখতে পাই. আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনার আগ্রহ কৃত বিষয় গুলোর বিজ্ঞপন আপনার সামনে এসব প্রতিষ্টান তুলে ধরেন যা সম্পুর্ন্ন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে করা হয়।
আমরা এসব উদহারণ গুলোর মাধ্যমে বুজতে পারি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত যা পরবর্তিতে আরো বৃদ্ধি পাবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। এই ধরনের মেশিন গুলোকে কাজ করতে দিলে তারা ভুল কম করে। পূর্বে ভুল করলেও তার ডাটা সংগ্রহ করার মাধ্যমে নিজেকে সচেতন করে তুলতে পারে। এতে এই ধরনের মেশিন এর ভুল করার প্রবণতা কমে যায়।
এসব মেশিনগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করতে কোনো প্রকার জটিলতা কিংবা ক্লান্তি তৈরি হয়না। এসব মেশিন গুলো মানুষের সাহায্য ছাড়াই ডেটা সংগ্রহ করে তা বিন্যস্ত করে কাজ করে থাকে। এতে কোনো প্রকার ভুল হয়না মানুষের মতো।
মানুষকে দিয়ে কাজ করতে গেলে মজুরি অথবা বেতন দেওয়ার ব্যাপার থাকে কিন্তু একবার এসব মেশিন গুলো কিনা অথবা তৈরি করার পর কোনো প্রকার মজুরি এর প্রয়োজন হয়না। এসব মেশিন কঠোর পরিশ্রম করতে পারে এতে মেশিন এর কোনো সমস্যা তৈরি হয়না। তাই নিখুঁত কাজ এর সাথে কোনো প্রতিষ্টান এর পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং পণ্য উৎপাদনে খরচ কমে যায়।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বর্তমানে মানুষকে অনেক সাহায্য করেছে। আমরা বলতে পারি ভবিষ্যৎ দুনিয়াতে এর চাহিয়া আরো বাড়বে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কেন বিপদজনক হতে পারে?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা এবং ব্যবহার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। কিন্তু এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। আমাদের সেগুলা জানা দরকার।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিপূর্ন সফল হলে মানব জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে যাবে। কারণ তখন অনেক প্রতিষ্টান আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করবে। এতে সাধারণ কর্মীরা চাকরি হারাবে। পৃথিবীতে বেকার এর পরিমান বৃদ্ধি পাবে।
শেষ কথা
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের দুনিয়াকে অনেক সহজ করে তুলবে এটা আমরা সকলেই বুজতে পারছি। আবার এটা হতে পারে আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকির। তাই আমাদের উচিত এটি নিয়ে সতর্ক থাকা। আমাদের সতর্কতাই পারে আমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে।
আরো জানুন: বিটকয়েন ইনকাম : বিটকয়েন উপার্জন করার সহজ উপায় সমূহ।