[et_pb_section fb_built=”1″ _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_row _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_column type=”4_4″ _builder_version=”4.16″ global_colors_info=”{}”][et_pb_text _builder_version=”4.16″ text_text_color=”#000000″ text_font_size=”16px” text_line_height=”1.8em” global_colors_info=”{}”]
সিফফিনের যুদ্ধ
উপস্থাপনা : হযরত ওসমান (রা)-এর শাহাদাতের পর হযরত আলী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যকার গৃহযুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্ঘটনা (সিফফিনের যুদ্ধ)। এ যুদ্ধই রাজতন্ত্রের সূচনা করে। তাই ইসলামের ইতিহাসে এ যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী । এ গৃহযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সিফফিনে সম্মুখ সমরের রূপ পরিগ্রহ করে, সিফফিনের যুদ্ধ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ বলেন- The second largest calamitous incident in the history of Islam.
আলী ও মুয়াবিয়ার মাঝে সংঘাতের কারণ/সিফফিনের যুদ্ধের কারণ :
১. খলিফার একক সিদ্ধান্ত :
হযরত আলী (রা) খেলাফত লাভের পর সামাজ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কুফা, বসরা, সিরিয়া ও মিসরের প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অপসারণ করে তদস্থলে নতুন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। হযরত মুয়াবিয়া (রা) ক্ষমতা হস্তান্তরে দ্বিমত পোষণ করেন।
২.ওসমান (রা)-এর হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দাবি :
মুয়াবিয়া (রা) এবং পদচ্যত আমীরগণ একয়োগে খলিফা হযরত ওসমান (রা)-এর হত্যাকারীর শাস্তি দাবি করেন। শাস্তি দেয়ার কোনো আয়োজন না দেখে তারা হযরত আলী (রা)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেন। ফলে আলী (রা)-এর সাথে মুয়াবিয়ার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
৩. মুয়াবিয়ার খেলাফতে বহাল থাকার আকাঙ্ক্ষা :
২০ বছর সিরিয়ার শাসনকর্তার দায়িত্ব পালনের সুবাদে সিরিয়াবাসী মুয়াবিয়া (রা)-এর প্রতি বেশ সন্তুষ্ট ছিল। ফলে তিনি খেলাফত হস্তান্তর করেননি।
৪. হযরত আয়েশার বিরোধিতা :
ঐতিহাসিক ওয়েল হাউসেন বলেন, হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় অবস্থানরত হযরত আয়েশা (রা) তালহা ও যোবায়েরের নিকট পথিমধ্যে মদিনার অবস্থা অবগত হয়ে হযরত আলী (রা)-কে দোষী সাব্যস্ত করেন। অতঃপর। তারা মক্কা হতে বিরাট সৈন্য দল নিয়ে বসরা অধিকারে যাত্রা করেন।
৫. তালহা ও যোবায়েরের বিরোধিতা :
ঐতিহাসিক মুর বলেন, তালহা ও যোবায়ের নামক দু’জন জননেতাও খলিফা হযরত ওসমান (রা)-এর হত্যার প্রতিশোধ দাবি করেন। অবশেষে তারা কুফা ও বসরার সুবাদারের পদ প্রার্থনা করেন। খলিফা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের এ দাবি পূরণে সক্ষম হননি। অধিকন্তু তিনি প্রাদেশিক শাসকদের পরিবর্তন করলে তারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করেন।
৬. হাশেমী ও উমাইয়া দ্বন্দ্ব :
হযরত আলী (রা)-এর খেলাফতকালে হাশেমী ও উমাইয়া গোত্রের পুরাতন দ্বন্দ পুনঃপ্রজ্বলিত হয়। খলিফা উমাইয়াগণকে পদচ্যুত করে হাশেমী গোত্রের লোকদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করায় উমাইয়াগণ মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে আলী (রা)-এর বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে।
৭. সম্পত্তি প্রত্যর্পণে অসম্মতি :
ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, হযরত ওসমান (রা)-এর সময়ে উমাইয়াগণ অবৈধভাবে বহু সরকারি ভূসম্পত্তি দখল করে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, কিন্তু হযরত আলী (রা) অন্যায়ভাবে দখলীকৃত সরকারি ভূসম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন। এতে উমাইয়াদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।ফলে সিফফিনের যুদ্ধ – এ দিকে ধাবিত হয়।
৮. সিফফিনের যুদ্ধ – এ সন্ধি প্রস্তাব :
ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, সাম্রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য খলিফা সরলভাবেই তালহা ও যোবায়েরের কাছে সন্ধির প্রস্তাব দেন। দুর্ভাগ্যবশত খলিফার পক্ষের লোকেরা এর বিরোধিতা করেন। একপর্যায়ে তার আপসে রাজি হলে অন্যপক্ষ ক্ষতির আশঙ্কা করেন। ফলে উমাইয়া ও হাশেমা দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে এবং গৃহযুদ্ধরূপে প্রকাশিত হয়।
৯. সিফফিনের যুদ্ধ – এ খারেজী সম্প্রদায়ের উৎপত্তি :
সিফফিনের যুদ্ধের ফলস্বরূপ খারেজীদের উৎপত্তি ঘটে। খারেজীদের বিদ্রোহ, অবাধ্যতা ও পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নাহরাওয়ানের যুদ্ধে খলিফা আলী (রা)-এর শক্তি ও ক্ষমতা বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর অবস্থান সুদৃঢ় হয়।
১০. রাজধানী স্থানান্তর :
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রাজধানী মদিনা হতে কুফায় স্থানান্তর করার ফলে আনসারগণের কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হয়ে হযরত আলী (রা) হতে দূরত্বে অবস্তান করেন। অন্য দিকে বিপদের সময় কুফাবাসীও তাকে সহায়তা করেনি।
সিফফিনের যুদ্ধের ঘটনাবহ :
১. সিফফিনের যুদ্ধ – এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান :
উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হলে হযরত আলী (রা) সর্বশেষ শান্তি প্রস্তাবসহ মুয়াবিয়া (রা)-এর নিকট পত্র পাঠান। মুয়াবিয়া (রা) এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হযরত আমর ইবনুল আস (রা)-এর সাথে পরামর্শক্রমে হযরত আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
২. মুয়াবিয়ার অসহযোগিতা :
হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর অসহযোগিতার প্রেক্ষিতে হযরত আলী (রা) ৬৫৭ সালের জুলাই মাসে ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হন। মুয়ারিয়া (রা)ও ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে সিফফিন নামক প্রান্তরে পরস্পরের মুখোমুখি হন এবং ৬৫৭ সালের ২৬ জুলাই উভয়ের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কয়েকদিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। যুদ্ধের একপর্যায়ে সন্ধির প্রস্তাব উঠলে হযরত আলী (রা) এ প্রস্তাবে সম্মত হন।
৩. দুমাতুল জালের মীমাংসা :
উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুমাতুল জালে সমঝোতা ও শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে আলোচনা শুরু হয়। আবু মুসা আশয়ারী (রা) আলী (রা)এর পক্ষে এবং আমর ইবনুল আস (রা) মুয়াবিয়া (রা)-এর পক্ষে প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। রায়ে আলী (রা)-এর পদচ্যুতি এবং তদস্থলে মুয়াবিয়া (রা)-এর মনোনয়ন ঘোষিত হলে শান্তি সমঝোতার পুরো প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এতে মুয়াবিয়া (রা)-এর কূটনৈতিক বিজয় হয় এবং হযরত আলী (রা) রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন।
হযরত আলী (রা.) ও হযরত মু’আবিয়া (রা.) এর মধ্যে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধ ফলাফল:
১. খেলাফতের পরিসমাপ্তি :
ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, হযরত আলী (রা) ও হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যে গৃহযুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।এ গৃহযুদ্ধ ইসলামী খেলাফতের মর্যাদা বিলীন করে। শুধু তাই নয়, হযরত আলী (রা)-এর জীবদ্দশাতেই কার্যত মুসলিম সাম্রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে।
২. খারেজীদের উ দ্ভব:
সিফফিনের যুদ্ধ, দুমাতুল জালের সিদ্ধান্ত, হযরত আলী (রা)এর নমনীয় নীতি ইত্যাদির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুসলমানদের মধ্যে এক চরমপন্থি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এরা ইতিহাসে খারেজী নামে প্রসিদ্ধ। এ সম্প্রদায়ের নাশকতামূলক কার্যক্রমে ইসলামের প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।
৩. মুয়াবিয়ার শক্তি বৃদ্ধি :
এ গৃহযুদ্ধের ফলে হযরত আলী (রা)-এর শক্তি হ্রাস পায় এবং প্রায় ১২ হাজার সৈন্য পক্ষ ত্যাগ করলে তার সামরিক শক্তি খর্ব হয়। অন্যদিকে মুয়াবিয়া (রা)-এর শক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি প্রকটভাবে বৃদ্ধি পায়।
৪. মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট :
ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, গৃহযুদ্ধের ফলে মুসলমানদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে মুসলমানগণ বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়।
৫. গণতন্ত্রের সমাধি :
হযরত আলী (রা)-এর শাহাদাতের পর ক্ষমতায় সমাসীন হন মুয়াবিয়া (রা)।
তার ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামের খেলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পথ রচিত হয়।
পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে রাজতন্ত্র খেলাফতের স্থান দখল করে নেয়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনোদিন মুসলিম জাতির ভাগ্যে খেলাফত জোটেনি।
৬. কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার পটভূমি :
ঐতিহাসিক ভনক্রেমার বলেন, এ গৃহযুদ্ধের ফলেই খেলাফতে বিভক্তি ও কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার পটভূমি সৃষ্টি হয় এবং তা উমাইয়া বংশের পতনের বীজ বপন করে।
৭. মর্যাদাহানি :
এ যুদ্ধের ফলে সুপ্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বুনিয়াদ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং জনগণ শাসকদের প্রতি আস্থা হারায়।
৮. খলিফার প্রাণনাশ :
এ গহযুদ্ধের ফলেই খলিফা হযরত আলী (রা) খারেজী ঘাতক আবদুর রহমান ইবনে মুলযিমের হাতে শাহাদাতবরণ করেন।
৯.প্রতারণা ও শঠতার প্রসার:
পরবর্তীকালে উদ্ভূত যে কোনো সমস্যা সমাধানে সুন্নাহর দিকনির্দেশনার পরিবর্তে শঠতা ও হঠকারিতার আশ্রয় গ্রহণের প্রবণতা সষ্টি হয়
১০. অসংখ্য মুসলমানের প্রাণনাশ :
হযরত আলী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যকার সংঘর্ষে অসংখ্য মুসলমানের প্রাণনাশ এবং ইসলামের ঐক্য, সংহতি ও সৌন্দর্যের আদর্শবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১১. কুরআন হাদীসের অবমাননা :
ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, এ যুদ্ধের ফলে হাদীস অবমাননার প্রবণতা শুরু হয়।
১২. সুদূরপ্রসারী প্রভাব :
এ যুদ্ধের প্রভাব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যবহ। এ যুদ্ধের পর সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরবর্তীকালে কারবালার নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
আলী (রা)-এর ব্যর্থতা ও মুয়াবিয়া (রা)-এর সাফল্যের কারণ :
১. তালহা ও যোবায়েরের ইন্তেকাল :
তালহা ও যোবায়ের (রা) ছিলেন হযরত আলী (রা)-এর অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং ইসলামের দুই অপ্রতিদ্বন্দ্বী সেবক। তাদের ইন্তেকাল হযরত আলী (রা)-এর জন্য এক চরম বিপর্যয় বলে প্রমাণিত হয়।
২. খেলাফত লাভের পর সৃষ্ট সংকট :
হযরত ওসমান (রা) শহীদ হওয়ার ফলে নানা সংকট দেখা দেয় এবং এ সংকট মোকাবেলায় হযরত আলী (রা)-এর অবস্থা শোচণীয় হয়ে পড়ে। ফলে তিনি খেলাফতের আসনে দৃঢ়ভাবে বসার সময় সুযোগ পাননি।
৩. সিফফিনের যুদ্ধ – এ আলী (রা)-এর অদূরদর্শিতা :
ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, হযরত আলী (রা) সাহসী যোদ্ধা ছিলেন বটে, কিন্তু মুয়াবিয়া (রা)-এর মতো সংগঠক ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন না। মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন সুদক্ষ ও বিচক্ষণ, যার কারণে তিনি। হযরত আলী (রা)-এর ওপর জয়ী হয়েছেন।
৪. হযরত ওসমানের খেলাফতের জের :
হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতির জের হযরত আলী (রা)-এর খেলাফতেও চলতে থাকে। আমীর আলীর ভাষায়, “হযরত ওমর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলে তার চারিত্রিক দৃঢ়তা আরব জাতিকে সংঘবদ্ধ রাখতে সাহায্য করতো এবং ইসলামের জন্য ধ্বংসকারী ভয়াবহ গৃহযুদ্ধগুলো প্রতিরোধ করতো”
৫. সিফফিনের যুদ্ধ – এ মুয়াবিয়ার প্রতি সিরীয়দের সমর্থন :
প্রায় ২০ বছর যাবৎ সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে মুয়াবিয়া (রা) সিরিয়াবাসীর অকুণ্ঠ সাহায্য সমর্থন লাভ করেন। পক্ষান্তরে হযরত আলী (রা)-এর কর্মস্থল কুফার জনগণ ছিলেন চপলমতি ও দুর্বল প্রকৃতির। তাই তারা দুর্যোগ মুহূর্তে আলী (রা)-কে যথার্থ সহায়তা দেয়নি।
৬. সিফফিনের যুদ্ধ – এ আয়েশা (রা) ও খারেজীদের বিদ্রোহ :
ঐতিহাসিক খোদা বখশ বলেন, তালহা ও যোবায়েরের ইন্তেকাল হলে হযরত আয়েশা (রা) বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। এতে হযরত আলী (রা)-এর শক্তি খর্ব হয়ে পড়ে। অপরদিকে খারেজীদের বিদ্রোহের ফলেও হযরত আলী (রা)-এর শক্তি খর্ব হয় এবং হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৭. রাজধানী স্থানান্তর :
মদিনা হতে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করে হযরত আলী (রা) দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেননি। ফলে একদিকে তিনি মৌলিক ইসলামী আদর্শের কেন্দ্র মক্কা মদিনায় অবস্থানরত কুরাইশ বংশের লোকদের আস্থা হারান,অপর দিকে কুরাইশ আভিজাত্য ও প্রাধান্যে ঈর্ষান্বিত কুফাবাসীদের সাহায্য সমর্থনও করতে পারেননি।
৮. হাশেমী উমাইয়া দ্বন্দ :
ঐতিহাসিক মুর বলেন, হাশেমী উমাইয়া সংঘর্ষ হযরত আলী(রা)-এর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। এ সংঘর্ষে উমাইয়া বংশের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মুয়াবিয়ার খেলাফত লাভের পথ সুগম হয়। সর্বোপরি তিনি রাজধানী দামেশকে স্থানান্তর করে নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করেন।
৯. আলী ও মুয়াবিয়ার সমর্থকদের মধ্যে পার্থক্য :
হযরত আলী (রা)-এর সমর্থকদের অপেক্ষা মুয়াবিয়া (রা)-এর সমর্থকদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা অধিক ছিল। হযরত আলী (রা)-এর সহযোগী সমর্থক আবু মুসা আশয়ারী (রা)-এর তুলনায় মুয়াবিয়ার পক্ষের আমর ইবনুল আস (রা) অনেক বিচক্ষণ ছিলেন। এজন্য আলী (রা)-এর পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
১০. দীর্ঘসূত্রতা :
মুর বলেন, “সমঝোতা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা হযরত আলী (রা) এর পতনের অনিবার্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কর্নেল ওসবনের মতে, খলিফা ওমরের মতো কঠোর প্রকৃতির লোক হলে অনায়াসে দুর্ধর্ষ ও শৃঙ্খলাহীন আরবদেরকে সার্থকভাবে শাসন করতে সমর্থ হতেন।
আলীর সহনশীলতা, মহানুভবতা, মানবতাবোধ এবং সত্যের প্রতি অনুরক্তিই শত্রুপক্ষকে তাদের অবস্থান সুসংহত করতে সুযোগ দান করে।
১১. পরামর্শ উপেক্ষা :
হযরত আলী (রা) খেলাফত লাভ করে প্রশাসনিক রদবদলপূর্বক রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা বিধানের চেষ্টা করেন।
প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের পদচ্যুত করে নতুন প্রশাসক নিযুক্ত করেন।
কিন্তু মুগীরা ও ইমাম হাসান (রা)-এর পরামর্শ সত্ত্বেও হযরত আলী (রা) সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া (রা)-কে পদচ্যুত করে দুর্বল সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করেন।
মুর বলেন, “সরল পথ ধরে হযরত আলী (রা) যে রাজনৈতিক ভুল করেন তার মাসুলস্বরূপ তাঁকে খেলাফত ও নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হয়।”
১২. আমর ইবনুল আসের কূটনীতি :
আমর ইবনুল আস (রা)-এর কূটনীতির ফলে মুয়াবিয়া (রা) সাফল্য অর্জনে সমর্থ হন।
ঐতিহাসিক হিট্টির মন্তব্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি আমরকে ‘আরব কূটনৈতিক মেধা’ বলে অভিহিত করেন।
উপসংহার :
হযরত আলী ও মুয়াবিয়া (রা)-এর মধ্যকার গৃহযুদ্ধের ফলে ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়।
এর ফলে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এবং মুয়াবিয়া (রা) ইসলামী খেলাফতের মসনদে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
তাই ঐতিহাসিক ভক্রেমার বলেন-
If the conflict between Ali and Muawiah had never occured and the later days of Islam continued without a cloud, the future of the Muslims would have been happier and perhaps more successful.
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]